স্টাফ রিপোর্টার ● নান্দাইল নিউজ
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বেতাগৈর ইউনিয়নের চর কোমরভাঙ্গা গ্রামে ৭ বছরের শিশু আবু সালিমকে জ্বিন তাড়ানোর নামে হত্যার উদ্দেশ্যে শারীরিক নির্যাতন করে কথিত দুই নারী কবিরাজ। আফাজ উদ্দিনের পুত্র আবু সালিম স্থানীয় শহীদ নজরুল কিন্ডার গার্টেনের নার্সারির ছাত্র। বর্তমানে শিশুটি নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার আবু সালিমের জ্বর হলে প্রতিবেশি নবী হোসেনের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৪৫) ও তার মেয়ে স্মৃতি আক্তার (১৪) জ্বিন তাড়ানোর কথা বলে শিশুর ওপর নির্যাতন শুরু করে। প্রতিদিন রাতে শিশুটির ঘরে গিয়ে তাকে চেয়ারের সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে বাঁশের কঞ্চি ও ব্লেড দিয়ে সমস্ত শরীরে নির্যাতন চালায়।
শিশুটির বাবা কলার ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিন অনলাইন নান্দাইল নিউজকে জানায়, টানা ৬ দিন ধরে আম্বিয়া খাতুন ও তার মেয়ে স্মৃতি আক্তার আমার ছেলের ওপর নির্যাতন চালায়। আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের জ্বিনের ভয় দেখিয়ে বলে আমার বাড়ি-ঘর সব জ্বিনের দখলে চলে গেছে, তা মুক্ত করতে হবে। এমনকি আমি ঘর থেকে বের হলে একটি কালো ছায়া আমাকে তাড়া করে। আমাদের জানায়, ঘরের মাটির নিচে গুপ্ত ধনও রয়েছে। ফলে কবিরাজ মা ও মেয়ের সব কথা মেনে চলতে বাধ্য হই। কবিরাজের কথা মতো স্থানীয় বাজার থেকে কাফনের কাপড়, ব্লেড এনে দেই। জঙ্গল থেকে বাঁশের কঞ্চিও এনে দেই। এগুলো দিয়ে কবিরাজ আমার ছেলের ওপর অমানষিক নির্যাতন চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী অনলাইন নান্দাইল নিউজকে জানায়, শিশুটির মুখে কাপড় গুজে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে নিয়মিত পিটায়। ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এভাবে নির্যাতনে শিশুটি বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কবিরাজ জ্বিনদের উদ্দেশ্যে বলে এত রক্ত দিলাম তোরা এগুলো খেয়ে চলে যা। শিশুটির পরিবারের উদ্দেশ্যে কবিরাজ মা মেয়ে আরও জানায়, আমি তোমার ছেলেকে মারছি না, মারছি বদ জ্বিনকে। ওরা চলে গেলে তোমার ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় শিশুটির শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে চলে গেলে তাকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শিশুটি যন্ত্রনায় ছটছট করছে। শরীর জুড়ে ব্লেডের আছর রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা জখমের কালো দাগ।
এদিকে, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে প্রচার হওয়ায় এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে কবিরাজ মা মেয়েকে ধাওয়া করলে আম্বিয়া খাতুন পালিয়ে যায়। মেয়ে স্মৃতি আক্তারকে ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। স্মৃতি আক্তার জানায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শিশু আবু সালিমকে কবিরাজি চিকিৎসার নামে হত্যার চেষ্টা করা হয়ে ছিল।
সরজমিনে বুধবার সকালে শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা সজেদা খাতুন অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে লুটে পড়ে রয়েছে। তার আত্মীয়-স্বজনরা আহাজারি করছে।
জানতে চাইলে নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান অনলাইন নান্দাইল নিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
(প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনুমতি ছাড়া ‘নান্দাইল নিউজ’-এর ওয়েবসাইটের কোন লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। ‘ সময়ের আয়না’ ফেসবুক আইডি আমাদের সহযোগি সামাজিক গণমাধ্যম। তবে ‘নান্দাইল নিউজ’- এর প্রিয় পাঠকগণ যে কোন নিউজ ও ছবি ফেসবুকে শেয়ার করলে কোন আপত্তি থাকবে না)