রঙিন স্কুলটিতে শুধু নেই পাঠদান !
শাহ্ আলম ভূঁইয়া ● নান্দাইল নিউজ
ঝলমলে
রঙিন স্কুল। আছে
২০৭ জন ছাত্র-ছাত্রী। স্কুলটিতে
প্রয়োজনীয় ক্লাস রুম, বেঞ্চ,
বোর্ড ইত্যাদি শিক্ষা উপকরণ সহ
শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্যে একচিলতে মাঠও
রয়েছে। আছে
একজন অফিস সহায়ক।
শিক্ষকের অভাবে শুধুমাত্র স্কুলটিতে
নেই পাঠদান! ৬ জন শিক্ষকের
স্থলে বর্তমানে মাত্র ১ জন
শিক্ষক রয়েছে স্কুলটিতে।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীর বেতাগৈর ইউনিয়নের
১০ নং খড়িয়া সরকারী
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।
সরজমিনে
স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়,
খুদে শিক্ষার্থীরা এলোমেলোভাবে দৌঁড়াদৌড়ি করছে। কেউ
মাঠে, কেউ ক্লাস রুমে
চিৎকার, হইহুল্লোড় করছে। ছাবিনা
ইয়াছমিন নামে একজন সহকারী
শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের সামলে
নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি
একমাত্র শিক্ষক বর্তমানে স্কুলটিতে
লেখাপড়ার দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা যায়, স্কুলটিতে প্রধান
শিক্ষকসহ ৬ জন শিক্ষকের
পদ রয়েছে। তার
মধ্যে তিনজন ধাপে ধাপে
প্রভাব খাটিয়ে ও কর্তৃপক্ষকে
ম্যানেজ করে সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের বদলি নির্দেশিকা অমান্য
করে সুবিধা মতো স্কুলে
বদলি হয়ে গেছেন।
বর্তমান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা
কর্মকতা যোগদানের পর থেকে ধাপে
ধাপে এই স্কুল থেকে
শিক্ষকরা বদলি হয়ে গেছে। তহ্মিনা
আক্তার নামে একজন প্রধান
শিক্ষক এ স্কুল থেকে
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে
অন্য উপজেলায় বদলি হয়ে চলে
গেছেন। এর
পর থেকে স্কুলটিতে প্রধান
শিক্ষক পদটিও শূন্য রয়েছে। বর্তমানে
স্কুলটিতে মোট তিনজন শিক্ষক
সহকারী শিক্ষক রয়েছেন।
এই তিনজনের মধ্যে সুফিয়া খাতুন
রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আর রোবানা
সুলতানা আছেন প্রশিক্ষণে।
ছাবিনা
ইয়াছমিন জানান, স্কুলটিতে প্রাক্
-প্রাথমিক শ্রেণিতে ৫১ জন, প্রথম
শ্রেণিতে ৪৫ জন, দ্বিতীয়
শ্রেণিতে ২৮ জন, তৃতীয়
শ্রেণিতে ৩০ জন, চতুর্থ
শ্রেণিতে ৩২ জন ও
পঞ্চম শ্রেণিতে ২১ জন শিক্ষার্থী
রয়েছে। শিক্ষার্থীদের
সাথে কথা বলতে চাইলে
ছাবিনা ইয়াছমিন বাঁধা দিয়ে বলেন,
ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলার
দরকার নেই। যা
জানতে চান আমাকে বলুন।
একজন শিক্ষকের ভোটার তালিকা প্রণয়ন,
তা হালনাগাদ করা, ভোট গ্রহণ,
শিশু জরিপ, কৃষিশুমারি, আদমশুমারি,
উপবৃত্তি তালিকা প্রণয়ন, তা
প্রাপ্তিতে সহযোগিতাসহ ১৩ ধরনের কাজ
করতে হয়। এতো
সব একা তিনি কিভাবে
সামলাচ্চেন জানতে চাইলে বলেন,
ক্লাসে ক্লাসে দৌঁড়াদৌড়ি করতে
করতেই সময় চলে যায়। কোন
কাজই ভালোভাবে করা সম্ভব হয়
না। এই
স্কুল থেকে আমিও বদলির
চেষ্টা করছি। কিন্ত
চাকরি নতুন হওয়ায় আমি
বদলি হতে পারছি না।
কয়েকজন
এলাকাবাসী জানান, শিক্ষার গুণগত
মান নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা
স্কুলটিতে শিক্ষকের অভাবে লেখাপড়াই হচ্ছে
না। ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে এসে কিছুক্ষণ
খেলাধুলা করে বিস্কুট নিয়ে
চলে যায়। ডেপুটেশনে
একজন শিক্ষক মাঝে মধ্যে
আসেন বলে তারা জানায়। এলাকাবাসী
আরও জানান, উপজেলা সদর
থেকে স্কুলটির দূরত্ব প্রায় ২০
কিলোমিটার হওয়ায় ও যোগাযোগ
ব্যবস্থা তেমন সুবিধাজনক না
হওয়ায় প্রশাসনিক তদারকিও নেই।
স্কুল
থেকে ফেরার পথে দেখা
হয় মশিউর আলম নামে
জাহাঙ্গীরনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষকের সাথে। তিনি
জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিস
থেকে তাকে মৌখিকভাবে তাকে
বলা হয়েছে খড়িয়া সরকারী
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস নিতে।
কিন্তু তার কর্মস্থলে প্রথমে
হাজিরা দিয়ে পরে ওইস্কুলে
যেতে হয়। খড়িয়া
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছাবিনা
ইয়াছমিন তার স্ত্রী পরিচয়
দিয়ে জানান, স্কুলটিতে শিক্ষক
স্বল্পতার জন্য এবং স্ত্রীকে কিছুটা
সহযোগিতা করতে ওই স্কুলে
যেতে হয়।
জানতে
চাইলে নান্দাইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা
মো. আলী সিদ্দিক অনলাইন
নান্দাইল নিউজকে বলেন, নতুন
শিক্ষক নিয়োগ হলে ওই
স্কুলের শূন্য পদগুলো পুরণ
করা হবে। স্কুলের
লেখাপড়া যাতে বিঘ্নিত না
হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে
জরুরি ভিত্তিতে ডেপুটেশনে আরও শিক্ষক ওই
স্কুলে দেয়া হবে।
শিক্ষক বদলি হয়ে যাওয়ার
বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারী
বিধি মেনেই অন্যান্য শিক্ষক
বদলি হয়েছেন।
(প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনুমতি ছাড়া ‘নান্দাইল নিউজ’-এর ওয়েবসাইটের কোন লেখা বা ছবিনকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। ‘সময়ের আয়না’ ফেসবুকআইডি আমাদের সহযোগি সামাজিক গণমাধ্যম। তবে ‘নান্দাইল নিউজ’-এর প্রিয়পাঠকগণ যে কোন নিউজ ও ছবি ফেসবুকে শেয়ার করলে কোন আপত্তি থাকবে না)